বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:বাংলায় করোনায় মৃত্যু হার ছাড়িয়ে গেল ২ হাজারের গণ্ডি। শুধু তাই নয়, এদিন সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় ২ হাজার ২০০ জন। ফলে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগে রয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সচেতন থাকার জন্য তাঁরা সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করেছেন। জনসচেতনতা ছাড়া এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন বলে মনে করছেন তাঁরা। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শও তঁারা দিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এখন রাজ্যে করোনা পরীক্ষার হার যথেষ্ট বেড়েছে। তাই সংক্রমণও বেশি ধরা পড়ছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাও বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। কেউ যেন অযথা ভয় না পান।
শনিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন থেকে জানা গিয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সংক্রমিত হয়েছে ২ হাজার ১৯৮ জন। শুক্রবার সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ১ হাজার ৮৯৪ জনের শরীরে। ফলে রাজ্যে এখন মোট সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ২০৯ জন। তবে এখন কোভিড ভাইরাস সক্রিয় রয়েছে ১৫ হাজার ৫৯৪ জনের শরীরে। এদিন যাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৬৪৮ জনই কলকাতার বাসিন্দা। এর পরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। এই জেলায় সংক্রমিত হয়েছেন ৫৫৪ জন। শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। ফলে মোট মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছে গেল ১ হাজার ৭৬ জনে। এই মৃত্যু সংখ্যার মধ্যে কলকাতার রয়েছেন ৫৬১ জন, উত্তর ২৪ পরগনার ২০৪ জন, হাওড়ার ১৪২ জন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৪৮ জন, হুগলির ৪০ জন, দার্জিলিংয়ের ১৪ জন, পশ্চিম মেদিনীপুরের ১১ জন, নদিয়া ও পূর্ব মেদিনীপুরের ৯ জন, মুর্শিদাবাদ ও পশ্চিম বর্ধমানের ৭ জন, মালদার ৫ জন, বীরভূম ও পূর্ব বর্ধমানে ৩ জন, আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং ও উত্তর দিনাজপুরে ১ জন করে মৃত্যু হয়েছে। তবে কোচবিহার, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামে একজনেরও মৃত্যু হয়নি।
তবে এদিন করোনা–মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন রেকর্ড সংখ্যক মানুষ। এদিন করোনা থেকে সেরে উঠেছেন ১ হাজার ২৮৬ জন। এই প্রথম একদিনে হাজার জনের বেশি মানুষ বাড়ি ফিরে গেলেন। ফলে মোট করোনা–মুক্ত হয়ে সুস্থ মানুষের সংখ্যা দাঁড়াল ২৩ হাজার ৫৩৯ জন। যদিও রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা দাবি করেছেন, বাংলার অবস্থা মোটেও আতঙ্কিত হওয়ার মতো নয়। এদিন নবান্নে তিনি বলেন, ‘আগামিদিনে কলকাতা–সহ জেলাগুলিতে সংক্রমণ আরও বাড়বে। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো আমরা দ্রুত বাড়াচ্ছি। তাই বিষয়টি নিয়ে অযথা ভয় পাবেন না।’
তিনি দাবি করেন, ‘বাংলার হাসপাতালগুলিতে এখনও করোনা রোগীদের জন্য শয্যার অভাব শুরু হয়নি। কলকাতার হাসপাতালগুলিতেই দেড় হাজার শয্যা ফাঁকা রয়েছে।’ তিনি এ দিন এ কথাও জানান, রাজ্যে করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হারও যথেষ্ট কম। করোনায় জাতীয় গড় মৃত্যুর প্রায় সমান। রাজ্যে এখন মৃত্যুর হার ২.৭৬ শতাংশ। এদিন করোনা পরীক্ষা হয়েছে ১৩ হাজার ৪৬৫ জনের। করোনা–কালে এত পরীক্ষাও রাজ্যের ক্ষেত্রে একটা রেকর্ড। তবে অনেকেই বলছেন, এই পরীক্ষার হার আরও বাড়াতে হবে। তবেই করোনা সংক্রমণ রাজ্যে কতখানি থাবা বসাতে পেরেছে, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা করা যেতে পারে।